অনেক নাম থেকে যায় প্রচারের আলোর বাইরে ।
প্রচার বিমুখ এই মহান মানুষের নামাঙ্কিত বিশেষ কিছু এই ভারতে না থাকলেও জাপানের রাজধানী টোকিওতে রয়েছে তাঁর কালো গাউন পরিহিত মূর্তিটি । নিচে জ্বলজ্বল করছে এই মহান বঙ্গ-সন্তানের নাম ।
জাপানীরা কিন্ত পঞ্চাশ বছর পরেও ভোলেননি তাঁর অবদান ।
দিনটা ছিল নভেম্বরের ১২ তারিখ, সাল ১৯৪৮ । টোকিওর উপকন্ঠে এক বিশাল বাগান বাড়িতে চলছিলো বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো সহ মোট পঞ্চান্ন জন অপরাধীর বিচার । এদের মধ্যে আঠাশ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছিলো Class-A (crimes against peace) যুদ্ধাপরাধী , প্রমাণিত হলে যার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ।
সারা বিশ্ব থেকে আগত এগারোজন বাঘা বাঘা জুরী "যুদ্ধাপরাধীদের" দেখে একে একে ঘোষণা করছেন ......
"Guilty"....".Guilty"......"Guilty".........
হঠাৎই বজ্র নির্ঘোষে একজন বলে উঠলেন “Not Guilty!”!
হলঘরে নেমে এলো ভয়ংকর এক নিস্তব্ধতা ।
কে এই জুরী মহোদয় ?
পুরো নাম ডক্টর রাধাবিনোদ পাল । টোকিও যাবার আগে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম বিচারপতি, দুবছর উপাচার্য ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ।
১৮৮৬ সালে পূর্ববঙ্গের কুষ্ঠিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই বঙ্গসন্তান । তাঁর পড়াশুনা শুরু হয় তাঁরই পিতার প্রতিষ্ঠিত পাঠশালায় ঈমান পন্ডিতের কাছে । প্রথম জীবন থেকেই ছিলেন আপোষহীন আর নির্ভিক এই মহান মানুষটি ।
রাধাবিনোদ জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে স্কুল ফাইনাল পাশ করে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্ক নিয়ে M.Sc করার পর ফের আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন ও ডক্টরেট উপাধি পান ।
সম্পূর্ণ বিপরীত দুই বিষয় বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "Law and Mathematics are not so different after all”.
ফিরে আসি আবার টোকিওর আন্তর্জাতিক আদালতে । ডক্টর পাল তার অকাট্য যুক্তি দিয়ে বাকি জুরীদের বোঝান যে মিত্রশক্তিও
আন্তর্জাতিক আইনের সংযম ও নিরপেক্ষতার নীতিমালা লংঘন করেছে । তাছাড়া জাপানের আত্মসমর্পনের ইঙ্গিত উপেক্ষা করে তারা মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী দু দুটো আনবিক বোমা ব্যবহার করে হত্যা করেছে কয়েক সহস্র নিরপরাধ মানুষ । বারোশ বত্রিশ পাতা জুড়ে লেখা সেই রায় দেখে অধিকাংশ জুরী অভিযুক্তদের Class-A থেকে B তে নামিয়ে আনেন , রেহাই পান তারা মৃত্যুদন্ডের হাত থেকে ।
আন্তর্জাতিক আদালতে তাঁর এই রায় তাকে এবং ভারতকে বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি এনে দেয়।
জাপান কিন্ত ভোলেনি এই মহান মানুষটির অবদান । ১৯৬৬ সম্রাট হিরোহিতো তাঁকে সেদেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ' কোক্কো কুনশাও' সম্মানে ভূষিত করেন ।
টোকিও এবং কিয়াটোতে দুটি ব্যস্ত রাস্তা তাঁর নামে রাখা হয়েছে । আইন পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার লেখা রায় । টোকিওর সুপ্রীম কোর্টের সামনে বসানো আছে তার গাউন পরা মূর্তি ।
২০০৭ সালে ওদেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দিল্লীতে এসে ডক্টর পালের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । শোনা যায় বুদ্ধবাবুর মন্ত্রীসভার এক বরিষ্ঠ সদস্য শিনজো আবের সাথে ওনার ডোভার লেনের বাড়িতে আসেন । গেটের বাইরে ডক্টর রাধাবিনোদ পালের নেমপ্লেট দেখে সঙ্গী পুলিশ অফিসার কে বলেছিলেন, "লোকটি কে একটু খোঁজ নিওতো !"
👏👏👏💝💝💝
( সম্পাদিত )
No comments:
Post a Comment