Monday, March 18, 2019

অনেক নাম থেকে যায় প্রচারের আলোর বাইরে ....

অনেক নাম থেকে যায় প্রচারের আলোর বাইরে

প্রচার বিমুখ এই মহান মানুষের নামাঙ্কিত বিশেষ কিছু এই ভারতে না থাকলেও জাপানের রাজধানী টোকিওতে রয়েছে তাঁর কালো গাউন পরিহিত মূর্তিটি । নিচে জ্বলজ্বল করছে এই মহান বঙ্গ-সন্তানের নাম ।

জাপানীরা কিন্ত পঞ্চাশ বছর পরেও ভোলেননি তাঁর অবদান ।

দিনটা ছিল নভেম্বরের ১২ তারিখ, সাল ১৯৪৮ । টোকিওর উপকন্ঠে এক বিশাল বাগান বাড়িতে চলছিলো বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাওয়া জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো সহ মোট পঞ্চান্ন জন অপরাধীর বিচার । এদের মধ্যে আঠাশ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছিলো Class-A (crimes against peace) যুদ্ধাপরাধী , প্রমাণিত হলে যার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ।


সারা বিশ্ব থেকে আগত এগারোজন বাঘা বাঘা জুরী "যুদ্ধাপরাধীদের" দেখে একে একে ঘোষণা করছেন ......
"Guilty"....".Guilty"......"Guilty".........

 হঠাৎই বজ্র নির্ঘোষে একজন বলে উঠলেন  “Not Guilty!”!

হলঘরে নেমে এলো ভয়ংকর এক নিস্তব্ধতা ।

কে এই জুরী মহোদয় ?

পুরো নাম ডক্টর রাধাবিনোদ পাল । টোকিও যাবার আগে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম বিচারপতি, দুবছর উপাচার্য ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ।

১৮৮৬ সালে পূর্ববঙ্গের কুষ্ঠিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই বঙ্গসন্তান । তাঁর পড়াশুনা শুরু হয় তাঁরই পিতার প্রতিষ্ঠিত পাঠশালায় ঈমান পন্ডিতের কাছে । প্রথম জীবন থেকেই ছিলেন আপোষহীন আর নির্ভিক এই মহান মানুষটি ।

রাধাবিনোদ জেলায় সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে স্কুল ফাইনাল পাশ করে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্ক নিয়ে M.Sc করার পর ফের আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন ও ডক্টরেট উপাধি পান ।

সম্পূর্ণ বিপরীত দুই বিষয় বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "Law and Mathematics are not so different after all”.

ফিরে আসি আবার টোকিওর আন্তর্জাতিক আদালতে । ডক্টর পাল তার অকাট্য যুক্তি দিয়ে বাকি জুরীদের বোঝান যে মিত্রশক্তিও
 আন্তর্জাতিক আইনের সংযম ও নিরপেক্ষতার নীতিমালা লংঘন করেছে । তাছাড়া  জাপানের আত্মসমর্পনের ইঙ্গিত উপেক্ষা করে তারা মারাত্মক  ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী দু দুটো আনবিক বোমা ব্যবহার করে হত্যা করেছে কয়েক সহস্র নিরপরাধ মানুষ । বারোশ বত্রিশ পাতা জুড়ে লেখা সেই রায় দেখে অধিকাংশ জুরী অভিযুক্তদের Class-A থেকে B তে নামিয়ে আনেন , রেহাই পান তারা মৃত্যুদন্ডের হাত থেকে ।
 আন্তর্জাতিক আদালতে তাঁর এই রায় তাকে এবং ভারতকে বিশ্বজোড়া সুখ্যাতি এনে দেয়।

জাপান কিন্ত ভোলেনি এই মহান  মানুষটির অবদান । ১৯৬৬ সম্রাট হিরোহিতো তাঁকে সেদেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ' কোক্কো কুনশাও' সম্মানে ভূষিত করেন ।
 টোকিও এবং কিয়াটোতে দুটি ব্যস্ত রাস্তা তাঁর নামে রাখা হয়েছে । আইন পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার লেখা রায় । টোকিওর সুপ্রীম কোর্টের সামনে বসানো আছে তার গাউন পরা মূর্তি ।
২০০৭  সালে ওদেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দিল্লীতে এসে ডক্টর পালের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । শোনা যায় বুদ্ধবাবুর মন্ত্রীসভার এক বরিষ্ঠ সদস্য শিনজো আবের সাথে ওনার ডোভার লেনের বাড়িতে আসেন । গেটের বাইরে ডক্টর রাধাবিনোদ পালের নেমপ্লেট দেখে সঙ্গী পুলিশ অফিসার কে বলেছিলেন,  "লোকটি কে একটু খোঁজ নিওতো !"
👏👏👏💝💝💝

( সম্পাদিত )

No comments:

Post a Comment